এ আই (AI) আমাদের শিশুদের ভাষাগত দক্ষতার বিকাশে হুমকি হয়ে উঠছে না তো?
এ আই (AI) আমাদের শিশুদের ভাষাগত দক্ষতার বিকাশে হুমকি হয়ে উঠছে না তো?
আগামী দশ বা পনেরো বছরে, আমরা আমাদের শিশুদের নিয়ে এক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি; সেটা হলো, শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা। যে হারে AI প্রতিদিন কঠিন সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে, তা সত্যিই অকল্পনীয়, তবে AI এর নেগেটিভ দিক হিসেবে আমি মনে করি-- আগামীতে AI এর অত্যধিক ব্যবহার আমাদের শিশুদের সৃজনশীলতাকে নষ্ট করতে পারে। একটু সহজ করেই বলি তাহলে: উদাহরণস্বরূপ, আমরা আমাদের ছোটবেলার স্কুল জীবনের কথা চিন্তা করতে পারি। আমাদেরকে যখন বাংলা বা ইংরেজিতে কোনো রচনা, কম্পোজিশন, প্যারাগ্রাফ লিখতে বলা হতো, আমরা নিজেদের মত করেই মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতাম। বাংলা বা ইংরেজি পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোশ্চেন পেপার হাতে পাওয়ার পর যদি আমরা দেখতাম যে "কোনো রচনা, ভাব সম্প্রসারণ, ইত্যাদি কমন আসেনি", তাতেও আমরা কী সুন্দর প্রাসঙ্গিক ভাবে কিছুটা হলেও লিখে আসতাম। আমি বলছি না যে, আমাদের সময়কার শিক্ষাব্যবস্থা ভালো ছিল; আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সর্বদাই মুখস্থ ও পরীক্ষা নির্ভর। তবে, সেসময় আমরা নিজেদের সৃজনশীলতাকে কিছুটা কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু বর্তমানে যে হারে AI এর ব্যবহার বেড়ে চলেছে, তাতে করে একটা সময় আমাদের শিশুদের ক্ষতি বোধহয় আমরা নিজেরাই ডেকে আনবো। অন্তত অন্য দেশের ক্ষেত্রে আমার এই কথা প্রযোজ্য না হলেও, আমাদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কথা মিলে যেতেই পারে।
আমরা এখন চাইলেই যেকোনো টপিক নিয়ে "পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা" লেখা AI ব্যবহার করে পেয়ে যাই। AI-র কাছে এটা কয়েক সেকেন্ডের বিষয় মাত্র। এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আসছে দিনগুলোতে AI আরো এডভান্সড হতে থাকবে। তাই, ভবিষ্যতের সে সময়টাতে যদি আমাদের শিশুদের কোনো টপিক নিয়ে কিছু একটা লিখতে বলা হয়, তাহলে তারা তো কষ্ট করে নিজের থেকে লিখতে নাও চাইতে পারে। কারণ, তারা তো এক ক্লিকেই পুরো একটা রেডিমেড লেখা পেয়ে যাবে AI থেকে। এতে করে একটা সময় যেমন তাদের ভোকাবুলারি হ্রাস পেতে থাকবে, তেমনি তাদের কমিউনিকেশন স্কিল ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। তখন দোষটা আসলে শিশুদের দিলে চলবে না, দোষটা আমাদেরই-- এটা মেনে নিতে হবে। আমরা যদি কিছুটা সচেতন হয়ে আমাদের শিশুদেরকে এখন থেকেই গ্রুম-আপ করতে পারি, তাহলে আমরা আগামীতে উপরিউক্ত কঠিন সমস্যা গুলোকে মোকাবেলা করতে পারবো। আমাদের ছোট বেলার সময়গুলোতে কোডিং কী জিনিস, সেটা জানার কোনো সুযোগই ছিল না। কিন্তু, বর্তমানে AI এর কল্যাণে আমাদের শিশুদেরকে আমরা ঘরে বসেই অনেক কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি। তবে, শিশুরা যেন তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশের স্পেসটুকু আমাদের সবার কাছে পায়, সেদিকটায় আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। শিশুদের ক্রিয়েটিভিটি, ভাষাগত দক্ষতা, কগনিটিভ ও কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে আমাদের সমাজকে এখন থেকেই ভাবতে হবে, কারিকুলামকে সে অনুযায়ী সাজাতে হবে, দরকার হলে উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো গুলোকে অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জ্ঞান শূন্য করার দায়ভার আপনি আমি কখনোই এড়াতে পারবো না, কখনোই না।
---
মোঃ আজমির ইবনে ইসলাম
Comments
Post a Comment